hsc-students-protest-20-08-2024
Bengali blogs, Articles & poetry by Akanjee

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে

সব দাবী যৌক্তিক হয় না, এবং সেগুলো মেনে নেওয়ার ফলাফল সাধারণত ইতিবাচক হয় না। মানুষ হিসেবে আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, ও প্রয়োজন আলাদা হওয়ায় আমরা কখনো কখনো এমন দাবী করি যা বাস্তবসম্মত নয় বা অন্যের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। অযৌক্তিক দাবী যেমন পরীক্ষা বাতিল মেনে নেওয়া শুধু সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং এটি আমাদের নিজস্ব নৈতিকতা ও মূল্যের সাথেও অসঙ্গতি তৈরি করে। যদি আমরা এমন কিছু মেনে নিই যা আমাদের বিশ্বাসের সাথে মেলে না, তাহলে আমরা নিজেদের প্রতি সৎ থাকতে পারি না। এমনকি, এটি আমাদের আত্মসম্মান বোধও নষ্ট করে।

১) পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জ্ঞান যাচাইয়ের প্রধান মাধ্যম

পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান যাচাইয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। শিক্ষার ধারাবাহিকতায় এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের মেধা, দক্ষতা এবং জ্ঞানকে মূল্যায়ন করে। পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দুর্বলতা এবং শক্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারে। পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রকৃত শিখন প্রক্রিয়া ও প্রাপ্ত জ্ঞান সম্পর্কে অবগত হতে পারে না। এর ফলে শিক্ষার মান কমে যায়, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

২) মেধাবীদের পরীক্ষা বিহীন উত্তীর্ণ হওয়া: মেধার মর্যাদার অপমান

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তারা পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ হতে চেয়ে তার জন্য আন্দোলন পর্যন্ত করেছে। অথচ, পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই হয়। যে মেধার অগ্রাধিকারের জন্য আন্দোলনের সূত্রপাত, সেই মেধা পরীক্ষার বাইরে চলে যাওয়ায় তা বঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যাপার।

৩) মেধার সম্মানহানি: জাতির আশা ভঙ্গ

মেধার মর্যাদার জন্য লড়াই করাকে এত নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে আজ মেধা শব্দটি নিজেই যেন চিৎকার করে বলতে চাইছে, “মেধাবীদের কাছে হেরে গেল মেধা!” জাতি আজ আশাহত। যে মেধার অগ্রাধিকারের জন্য এত আন্দোলন এবং প্রাণহানি ঘটেছে, তা চোখের সামনে মুখ থুবড়ে নর্দমায় পতিত হল। পরীক্ষা বিহীন উত্তীর্ণ হওয়া তথাকথিত মেধাবীরা এই সোনার বাংলার জন্য কোনও শুভ বার্তা বয়ে আনবে না।

৪) পরীক্ষার গুরুত্ব ও সামাজিক প্রতিযোগিতার অভাব

পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা সামাজিক প্রতিযোগিতা এবং দায়িত্ববোধের অভাব অনুভব করবে, আজ হোক বা কাল। তারা ভাবতে পারে যে কঠোর পরিশ্রম না করেও সফল হওয়া সম্ভব। এর ফলে, সমাজে এক ধরনের দায়িত্বহীনতার ভাব তৈরি হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শিক্ষার্থীদের মেধা, দক্ষতা এবং জ্ঞান যাচাই করে। তাই, পরীক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার না করে, শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।

৫) পরীক্ষাহীন উত্তীর্ণের নেতিবাচক প্রভাব

উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট স্তরে দক্ষতা অর্জন করতে হয়, যা সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী স্তরের শিক্ষার জন্য প্রস্তুত নয় বলেই ধরে নিতে হয়। ফলে, তারা উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের পর মারাত্মক অসুবিধায় পড়বে এবং কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান, আত্মবিশ্বাস, এবং ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

শেষ কথা:

পরীক্ষা শিক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা এবং দক্ষতা যাচাই করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। পরীক্ষা বিহীন উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কোনও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বরং, এটি শিক্ষার মানকে হ্রাস করবে এবং শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গুরুত্ব-সহকারে চিন্তা করা উচিত ছিল। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুশৃঙ্খল এবং গুণগত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.