আনসার বাহিনী বিলুপ্ত করা বা না করার বর্তমান সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম অভিমত প্রসঙ্গে:
আনসার বাহিনী বিলুপ্ত করা বা না করার বর্তমান সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম অভিমত প্রসঙ্গে:
গতকালের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবীর প্রেক্ষিতে দেশের এই অস্থিতিশীল পরিবেশে ফেইসবুকে অসংখ্য মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর বিলুপ্তির দাবী জানিয়েছেন আবার অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন আনসার সংখ্যায় এক হাজার আর দুই হাজার না। তারা ৬১ লক্ষ ওরা যদি এক হয়ে যায় আর ঢাকা চলে আসে তাহলে তথাকথিত মেধাবীরা ভ্যানগাড়িও পাবে না পালাতে।
সজীব ওয়াজেদ জয় ফেইসবুকে লিখেছেনঃ “সচিবালয়ের আশেপাশে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার জন্য আমাদের বুদ্ধিজীবীরা আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেছেন। তারপরও দুই সপ্তাহের মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে সেখানে সব সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। দায়িত্বে না থেকে সমালোচনা করা সহজ। ক্ষমতায় থাকা এবং শাসন করা একেবারেই আলাদা ব্যাপার।”
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (Ansar and Village Defence Party বা VDP) দেশের অন্যতম বৃহত্তম আধাসামরিক বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এবং স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সাথে সমন্বয় সাধন করা। বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে অঙ্গীভূত আনসার, ভিডিপি সদস্য এবং ব্যাটালিয়ন আনসার হিসেবে বিভক্ত।
১) প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক ইতিহাস:
বাংলাদেশ আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। আনসার আইন অনুমোদনের পর, ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে আনসার বাহিনী কার্যকর হয়। শুরুতে বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হলেও, পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় সাভারে এবং আরও পরে গাজীপুরের সফিপুরে জাতীয় আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে এটি আনসার একাডেমিতে উন্নীত করা হয়, এবং ১৯৯৫ সালে এর নাম পরিবর্তিত হয় আনসার-ভিডিপি একাডেমি হিসেবে।
২) গঠন ও কার্যক্রম:
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত: অঙ্গীভূত আনসার, ভিডিপি সদস্য, এবং ব্যাটালিয়ন আনসার। এ বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা করে। বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে, বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, মহিলা ভোটারদের নিরাপত্তা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩) মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আনসার বাহিনীকে বিদ্রোহী বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করে বিলুপ্ত করা হলেও, আনসার সদস্যরা ৪০ হাজার রাইফেলসহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৬৭০ জন সদস্য শহীদ হন, এবং তাদের অসামান্য সাহসিকতার জন্য ১ জন বীর বিক্রম ও ২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
৪) পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যক্রম:
১৯৭৬ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাথে আনসার বাহিনীর ব্যাটালিয়নগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। এসব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ১৯ জন আনসার সদস্য শহীদ হন এবং তিন-শতাধিক সদস্য অকাল মৃত্যু বরণ করেন।
৫) জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ভূমিকা:
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদানে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) একটি বিশেষ ইউনিট হিসেবে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে।
বাহিনীটি বাংলাদেশের সকল বড়ো প্রকল্পে এবং স্থাপনায় নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। দেশের প্রতিটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং স্থল বন্দরগুলোতে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। এসব কাজের দায়িত্ব পালনের সময় অনেক সদস্যই সন্ত্রাসী হামলায় আহত বা নিহত হয়েছেন।
৬) দুর্যোগ মোকাবেলা ও অন্যান্য কার্যক্রম:
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া অপারেশন রেলরক্ষা ২০১৩/১৪ এবং ২০১৫ সালে রেল নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৭) চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সন্ত্রাস দমন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, এবং সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সদস্যের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। তবুও, দেশের জনগণের সেবায় এ বাহিনী অবিচল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
বাহিনীর সাফল্য এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ইতিহাস থেকে বোঝা যায়, আনসার বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভবিষ্যতে এ বাহিনী আরও উন্নত ও শক্তিশালী হয়ে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
#আনসারবাহিনী #বিলুপ্তি #সামাজিকমাধ্যম #মতামত #বাংলাদেশ #সুরক্ষা #গ্রামপ্রতিরক্ষা #রাজনীতি #বিক্ষোভ #সচেতনতা #জনমত #শান্তি #নিরাপত্তা #ক্ষমতা #বুদ্ধিজীবী #সমালোচনা #অস্থিতিশীলতা #সামাজিকবিচার #জনগণ #আলোচনা
বাংলাদেশ নিয়ে ও বাংলা কবিতা সাহিত্য নিয়ে ক্লিক করুন
Discover more from Akanjee's Blogs, London, UK
Subscribe to get the latest posts sent to your email.