বই-কেনার-নেশা
Bengali blogs, Articles & poetry by Akanjee

বই সংগ্রহের নেশা: অপঠিত বইয়ের গল্প ও তার তাৎপর্য

বই কেনা, কিন্তু না পড়া: নেশা, অভ্যাস নাকি সম্ভাবনা?

আজকাল অনেকেই অভিযোগ করেন বই তো অনেক বিক্রি হচ্ছে, কিনছেনও অনেকে, কিন্তু পড়ছে ক’জন? যদি সত্যিই বই পড়া হতো, তাহলে কি সমাজের এত সমস্যা থাকত?

কেউ কেউ শুধু বই কিনে রাখেন, কিন্তু পড়েন না। জাপানি ভাষায় এর একটি শব্দ আছে; তসুন্দোকু। অর্থ হলো, বই কেনা এবং সেগুলো না পড়া। আর যদি কেউ বই কেনার নেশায় এতটাই ডুবে থাকেন যে, শুধু কিনেই যান, কিন্তু একেবারেই পড়েন না, সেটি বলা হয় বিব্লিওম্যানিয়া

বই কেনার এই নেশার কারণ কী?

অনেক কারণেই মানুষ বই কেনেন এবং সংগ্রহ করেন, কিন্তু সেগুলো পড়ার সময় পান না। এর পেছনে থাকতে পারে:

  1. আত্মপ্রদর্শন:
    আগে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল মর্যাদার প্রতীক। এখনো অনেকেই মনে করেন, বেশি বই থাকা মানে বেশি জ্ঞানী হওয়া।
  2. সংগ্রহের আনন্দ:
    বিরল বই সংগ্রহ, প্রিয় লেখকের সব কাজ জমা করা বা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্মারক হিসেবে বই সংগ্রহ করা অনেকের শখ।
  3. সংযোগের মাধ্যম:
    বইপ্রেমীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া বা নিজের পরিচয় তুলে ধরার জন্যও অনেক সময় বই কেনা হয়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বই কেনা আসে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এটা অনেকটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে সব মেনু দেখে মুগ্ধ হওয়া, যদিও সব খাওয়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব হয় না।

অপঠিত বই কি অপ্রয়োজনীয়?

অনেকে মনে করেন, বই না পড়া মানে সেটি কেনা অর্থহীন। তবে লেখক নাসিম নিকোলাস তালেব তার বই ‘দ্য ব্ল্যাক সোয়ান’-এ বলেছেন, অপঠিত বই আমাদের শেখার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এগুলো মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা কত কিছু জানি না।

পড়ার ইচ্ছায় যারা বই কেনেন, তাদের জন্য এই অপঠিত বই হয়ে ওঠে আত্মশিক্ষার প্রতীক। যত বেশি বই দেখি, তত বেশি বুঝি, শেখার কোনো শেষ নেই।

বই সংগ্রহের সুফল

অপঠিত বইয়েরও কিছু সুপ্ত সুবিধা রয়েছে:

  • গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে বই বেশি থাকে, সেখানে শিশুদের ভাষাগত, গাণিতিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নত হয়।
  • বই সংরক্ষণ জ্ঞানের সংরক্ষণও নিশ্চিত করে।
  • পুরোনো গ্রন্থাগারের মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জ্ঞানকে জীবন্ত রাখে।

তসুন্দোকু: শখ নাকি সম্ভাবনার প্রতীক?

তসুন্দোকু আমাদের জীবনের একটি বড় শিক্ষা দেয়, জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষা এবং বিনম্রতা। অপঠিত বইগুলো কেবল শখ নয়; এগুলো সম্ভাবনার, শিক্ষার এবং ভবিষ্যৎ প্রেরণার প্রতীক।

তাই, যতই বই কেনা হোক, প্রতিটি বই না পড়লেও সেগুলো আমাদের জীবনের অংশ হয়ে থাকে। বইয়ের স্তূপে থাকে অজানা জগতের সম্ভাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.