করিতে কোটা দূর জগৎ হইল কোটায় ভরপুর
Bengali blogs, Articles & poetry by Akanjee

সময় বদলেছে, তবে সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীরা বদলায়নি

⭐সময় বদলেছে, তবে সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীরা বদলায়নি⭐

আমাদের সমাজে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলেছে। প্রযুক্তি, যোগাযোগ, শিক্ষা, রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু একটি বিষয় বদলায়নি, আর তা হলো সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের চিরন্তন চরিত্র। তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রতিনিয়ত পদ্ধতি পরিবর্তন করলেও মৌলিকভাবে তাদের নীতি অপরিবর্তিত। এদের তেলের পদ্ধতি বদলায়নি; বরং তারা সময়ের সাথে সাথে আরও কৌশলী ও সুদূরপ্রসারী হয়েছে।

‘বৈষম্যবিরোধী’ শব্দটি এখন শক্তিশালী এবং প্রায়শই মিসইউজ হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই শব্দের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। যে কেউ যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ‘বৈষম্যবিরোধী’ শব্দটি ব্যবহার করছে। একটি শক্তিশালী শব্দ যেমন সমাজের কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে, ঠিক তেমনি অপব্যবহারও হতে পারে। আজকাল এই শব্দটি যত্রতত্র ব্যবহার করে মানুষ সুবিধা নিচ্ছে, যেটি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।

⭐ পদ্মা সেতু: স্বার্থের ছায়ায় আবদ্ধ একটি প্রয়াস

বাংলাদেশের পদ্মা সেতু একটি বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প, যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ করেছে। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়। কিছু মানুষ বলেন, “পদ্মাসেতু তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র দাদাদের জন্য,” অর্থাৎ কলকাতা থেকে আগরতলায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য। আগে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে ট্রেনে প্রায় ৩৫-৪০ ঘণ্টা সময় লাগতো; এখন সেই সময় কমে ৭ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। এই ধরনের মন্তব্যে জনগণের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে এবং দ্রুত যাতায়াতের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

⭐ শিক্ষা ও জঙ্গি সমস্যা: ভুল প্রাধান্য এবং বাস্তবতা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, কিছু চিহ্নিত জঙ্গীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, অথচ শিক্ষকদের তালিকা করে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এটা কি শান্তির বার্তা দেয়? এটি একটি বড় প্রশ্ন। সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেদের সুবিধা রক্ষার্থে এসব কার্যকলাপ করে চলেছেন। এ ধরনের কার্যকলাপ কেবল সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

⭐ ঘুষের সংস্কৃতি এবং বেতনবৃদ্ধির প্রভাব

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কর্মবিরতি এবং বেতন বাড়ানোর দাবি জোরালো হয়েছে। এর একটি কারণ হলো, এতদিন ধরে ঘুষ নেয়া যেত, কিন্তু এখন সেটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন মানুষ ভাবছে, এই বেতনে কিভাবে চলবে? ঘুষের টাকায় জীবনযাত্রার মান অনেকের উপরে চলে গেছে। ঘুষের সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বেতন কাঠামো এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন।

⭐ রাজনৈতিক ট্যাগিং এবং নিরপেক্ষতার অভাব

আমাদের সমাজে আরেকটি সমস্যা হলো রাজনৈতিক ট্যাগিং এবং নিরপেক্ষতার অভাব। কেউ যদি কোনো নির্দিষ্ট মতামত প্রকাশ করে, তখন তাকে ‘আওমি দালাল’, ‘বিয়েম্পির দালাল’, ‘সাম্রাজ্যবাদের দালাল’, ‘চিঙ্কুবাম’ বা ‘জ্ঞানপাপী’ বলে ট্যাগ করা হয়। এটি কোনো প্রকৃত সমাধান আনতে পারে না, বরং সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করে। সমাজে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টায়ও আমরা পক্ষপাতিত্বে জড়িয়ে যাচ্ছি, যা একান্তই দুঃখজনক।

⭐ নেতৃত্বের সংকট: প্রয়োজন মেরুদণ্ডওয়ালা নেতৃত্ব

আমাদের দেশে বর্তমানে নেতৃত্বের সংকট দেখা যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে প্রতিটি ঘটনা যেন একটি স্ক্রিপ্টেড নাটকের মতো সামনে আসছে। জনগণ একটি মেরুদণ্ডওয়ালা নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে, যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে এবং দেশকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ শীঘ্রই একটি খেলার মাঠে পরিণত হবে, যদি না একটি সঠিক ও দৃঢ় নেতৃত্ব আসতে পারে।

⭐ কোটার রাজনীতি এবং সংরক্ষণ নীতি

বাংলাদেশে কোটার রাজনীতি একটি বিতর্কিত বিষয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং এর পরবর্তী পরিণতি দেখে অনেকেই হতাশ। বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ গড়ে উঠেছে যেখানে মেধার চেয়ে কোটা এবং সংরক্ষণ নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তি তাদের যোগ্যতার স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

⭐ সমাপনী ভাবনা: সমাজের কীট এবং ভবিষ্যতের ভাবনা

সমাজে কিছু কীট আছেন যারা প্রতিনিয়ত আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। তারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নানাবিধ পদ্ধতি অবলম্বন করছে, যেগুলো সমাজের মূল চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে, যেন আমরা তাদের ফাঁদে পা না দিই। সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের থেকে সাবধান থাকাই বর্তমান সমাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

আমাদের প্রত্যাশা, আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়তে পারব, যেখানে বৈষম্যবিরোধী শব্দটির সঠিক ব্যবহার হবে এবং যার যার অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি সঠিক নেতৃত্বের অধীনে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে, যেখানে প্রত্যেকের মতামত ও অধিকারকে সন্মান করা হবে এবং সমাজে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে।

হায়রে বাংলাদেশ, ‘করিতে কোটা দূর জগৎ হইল কোটায় ভরপুর’ এই হল বর্তমান অবস্থা। লাল প্রোফাইল ওয়ালারাও হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পারছেন। আর জিওপলিটিক্স যারা বুঝেন না তারা অন্তত চেষ্টা করুন এ বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করার জন্য।


Discover more from Akanjee's Blogs, London, UK

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from Akanjee's Blogs, London, UK

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading