How, when, why?

কেন সপ্তাহে ৭ দিন?

সপ্তাহে ৭ দিন কেন? বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস।

সপ্তাহের ধারণা আমাদের জীবনে এতটাই স্বাভাবিক যে এটি নিয়ে সাধারণত আমরা খুব একটা চিন্তা করি না। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, কেন সপ্তাহে ঠিক ৭ দিন? কেন ৫ বা ১০ দিন নয়? কিংবা কেন সোমবারের পর সরাসরি রবিবার আসে না?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের অনেক পেছনে—প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, যা আজকের আধুনিক ইরাক।

চাঁদের চক্র ও ৭ দিনের সংযোগ

চাঁদ তার পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে প্রায় ২৯.৫ দিন নেয়। তবে এই দীর্ঘ সময় দৈনন্দিন জীবনের ব্যবস্থাপনার জন্য অসুবিধাজনক ছিল। মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়রা চাঁদের এই সময়কে ২৮ দিনে নামিয়ে এনে ৭ দিনের চারটি ভাগে বিভক্ত করে। কারণ, তারা লক্ষ্য করেছিল প্রতি ৭ দিন পর পর চাঁদের অবস্থান ও আকারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

ব্যাবিলনীয়রা শুধু চাঁদের পর্যায়ই নয়, সূর্যের গতি ও গ্রহের অবস্থান নিয়ে গভীর গবেষণা করেছিল। এই ৭ দিনের চক্র তাদের ধর্মীয় আচার এবং সামাজিক সময়সূচি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। উদাহরণস্বরূপ, তারা নতুন চাঁদ উদযাপনের মাধ্যমে মাসের সূচনা করত এবং এর ওপর ভিত্তি করে কৃষিকাজ ও ধর্মীয় উৎসবের সময় নির্ধারণ করত।


ধর্মীয় গুরুত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বে ৭ দিন

ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় শুরু হওয়া ৭ দিনের ধারণা পরে বিভিন্ন ধর্ম ও সৃষ্টিতত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

  • বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব: হিব্রু ও খ্রিস্টীয় ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ঈশ্বর ৬ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন। এই ধারণা ৭ দিনের সপ্তাহকে ধর্মীয় বৈধতা দেয়।
  • অন্যান্য সভ্যতা: প্রাচীন মিশরীয় ও সুমেরীয় সৃষ্টিতত্ত্বেও ৭ সংখ্যার গুরুত্ব দেখা যায়।

৭টি গ্রহের ধারণা

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদরা আকাশে দৃশ্যমান ৭টি গ্রহ (সূর্য ও চাঁদসহ) চিহ্নিত করেন:
সূর্য, চাঁদ, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি।
তারা বিশ্বাস করত, এই গ্রহগুলো মানুষের জীবন ও ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রতিটি দিনের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট গ্রহ এবং দেবতার নাম জুড়ে দেওয়া হয়। যেমন:

  • শনিবার: শনির দিন (Saturn’s Day)
  • রবিবার: সূর্যের দিন (Sun’s Day)
  • সোমবার: চাঁদের দিন (Moon’s Day)

গ্রিক ও রোমান সভ্যতার মাধ্যমে এই ধারণা আরও জনপ্রিয় হয় এবং আধুনিক ক্যালেন্ডারে এটি একটি স্থায়ী রূপ নেয়।


গ্রিক ও রোমানদের ভূমিকা

ব্যাবিলনীয়দের ধারণা গ্রিকরা গ্রহণ করে নিজেদের সংস্কৃতিতে যুক্ত করে। পরে রোমানরা এটি আরও কাঠামোবদ্ধ করে। তারা দিনগুলির নাম তাদের দেবতাদের নামে নির্ধারণ করে।

রোমানদের এই পদ্ধতি পরবর্তীতে লাতিনভিত্তিক ভাষাগুলোর (স্প্যানিশ, ফরাসি, ইতালীয়) পাশাপাশি জার্মানিক ভাষা (ইংরেজি) গোষ্ঠীতেও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ:

  • Tuesday এসেছে নর্স দেবতা Tiu থেকে।
  • Thursday এসেছে দেবতা Thor থেকে।

গ্রহের ক্রম ও দিন নির্ধারণ

রোমানরা গ্রহের গতি ও দূরত্বের ভিত্তিতে একটি ক্রম নির্ধারণ করেছিল:
শনি → বৃহস্পতি → মঙ্গল → সূর্য → শুক্র → বুধ → চাঁদ।
তারা প্রতিদিনের প্রথম ঘণ্টা নির্ধারণ করত একটি নির্দিষ্ট গ্রহের অধীনে, যা সপ্তাহের দিনগুলির ক্রমে প্রভাব ফেলত।

সপ্তাহে ৭ দিন থাকার পেছনে রয়েছে চাঁদের পর্যায়, ব্যাবিলনীয়দের গবেষণা, গ্রহের সংযোগ এবং রোমানদের সংস্কৃতিগত প্রভাব। এটি কেবল সময় মাপার একটি কাঠামো নয়, বরং বিজ্ঞান, ধর্ম ও সংস্কৃতির একটি ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার। আজও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই কাঠামো অনুসরণ করে, যা আমাদের অতীতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রক্ষা করে।


Discover more from Akanjee's Blogs, London, UK

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from Akanjee's Blogs, London, UK

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading